শীতে চা ছাড়া চলাই যায় না। দিনের শুরুতে এবং বিকালে গরম গরম চা না হলে কি আর চলে। তবে একটানা দুধ চা না খেয়ে চা হতে পারে ভিন্ন কিছু দিয়ে। ইচ্ছে করলে কিছু হেলদি উপাদান দিয়ে শরীরের জন্য উপকারী কিছু চা বানিয়ে নিতে পারেন। আজকে তাই কিছু স্পেশাল চায়ের রেসিপি দেয়া হচ্ছে যা শুধু শরীরই নয় স্কিন এবং বয়স ধরে রেখে শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করবে।
জ়াফরানি চা
উপকরনঃ
পানি – ২ কাপ
জাফরান – ৪-৫ টি
অর্গানিক মধু- ১/৪ চা চামচ
আদা কুচি – সামান্য
দারচিনি – ১ টুকরো
প্রনালী
★পানির সাথে আদা এবং দারচিনি দিয়ে জ্বাল দিন।
★কিছু সময় হলে সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে জ্বাল দিন।
★হয়ে গেলে ছেকে মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন।
→এই দারুণ জাফরান চা হজমশক্তিকে উন্নত করে, ত্বকের রঙ ফর্সা করে, ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল করে, চুলকে করে তোলে ঝলমলে, ত্বকে বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করে।
→প্রতিদিন ১ কাপ খেতে পারবেন।
** প্রেগন্যান্ট মায়েরা খেতে চাইলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ নিন।
ষষ্টিমধুর চা
উপকরনঃ
যষ্টিমধুর পাউডার ২ চা চামচ
মধু এবং পানি।
চায়ের কেটলিতে ২ চা চামচ যষ্টিমধু পাউডার দিয়ে তার ওপরে গরম পানি ঢেলে দিতে হবে। খুব ভালো মতো মিশিয়ে কিছু সময় রেখে সাথে মধু দিয়ে খেতে পারেন।
উপকারিতা
১. খাদ্যনালী ও পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে যষ্টিমধু চা। এলডিএল অক্সিডেশন রুখে হার্টের সমস্যা দূরে রাখে, টেস্টোস্টেরন সঠিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি ওজন কমাতেও সাহায্য করে এই চা।
২. এলার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।
৩. হজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্বল ইত্যাদি সমস্যার থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।
৪. ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন যষ্টিমধু। এটা মুখের দাগ, ব্রণর দাগ, ফুসকুড়ি ইত্যাদির থেকে ত্বককে ভাল রাখে। ত্বকের জেল্লা বাড়িয়ে দেয়।
৫. যষ্টিমধু মেজাজকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, হতাশা হওয়া থেকে মনকে ভাল রাখতে সাহায্য করে।
ডিটক্স চা
উপকরনঃ
এপেল সাইডার ভিনেগার ২ টেবিল চামচ
লেবুর রস ২ টেবিল চামচ
মধু ১ টেবিল চামচ
সিলন দারচিনি গুড়ো ১ চা চামচ
পানি ১ কাপ
সব গুলো উপকরন ভাল ভাবে মিক্স করে কিছু সময় বয়েল করে হালকা গরম অবস্থায় সকালে খালি পেটে খেতে পারেন।
ওজন কমাতে, স্কিন ভালো রাখতে প্রতিদিন সকাল সকাল এই ডিটক্স চা টি ট্রাই করতে পারেন। এটা সারাদিন শরীরকে ফ্রেশ রাখার পাশাপাশি অসংখ্য উপকার করে থাকে।
স্টার এনিস চা
উপকরনঃ
স্টার এনিস ২-৩ টি,
সিলন দারচিনি কয়েক টূকরো
গ্রিন টি অথবা ব্ল্যাক টি ১ টি
প্রনালীঃ
পানি নিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। ফুটে আসলে এতে স্টার এনিস, সিলন দারচিনি এবং গ্রিন টি অথবা ব্ল্যাক টি দিয়ে ৫ মিনিট রেখে কাপে ঢেলে পান করুন। চাইলে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার পান করুন।
আবহাওয়া পরিবর্তন এই সময় অনেকেই ভোগেন ফ্লুতে। ফ্লু থেকে বাচতে প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরে বসেই স্টার এনিস চা খেতে পারেন।
→স্টার এনিস হজমের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। গর্ভকালীন সময়ে বমিভাব দূর করতেও এটি দুর্দান্ত এক উপায়।
> এটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি সমৃদ্ধ। যা আপনার শরীরের টক্সিন দূর করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
> এটি শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। সেই সঙ্গে ঠাণ্ডা বা সর্দি সারাতে সেরা দাওয়াই এই মশলা।
> এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি। যা শরীরকে বিভিন্ন ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি তৈরি করে।
এর চা খুবই উপকারী। এছাড়াও স্টার এনিস পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা কাশি কমাতে ভাপ নিতে পারেন।
ইমিউনিটি হলুদ চা
উপকরনঃ
পানি ২ কাপ
ইমিউনিটি/গোল্ডেন মিক্স ২ চা চামচ
গ্রিন টি ২ টি
লেবুর রস অল্প
প্রনালিঃ
পানি তে লেবুর রস বাদে সব গুলো উপকরন জাল দিন। এবার নামিয়ে লেবুর রস দিয়ে খেয়ে নিন। এই চা ঠান্ডা অথবা গরম দুইভাবেই খাওয়া যায়। তবে এই শীতে গরম খাওয়াই বেশি উপকারী।
এই ইমিউনিটি/গোল্ডেন ড্রিংক মিক্স কাচা হলুদ, সিলন দারচিনি, আদা এবং আরও কিছু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এটা প্রমাণিত যে হলুদে থাকা কারকিউমিন হার্ট সুস্থ রাখে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং ইমিউনিটি বাড়াতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
এছাড়াও এই ড্রিংক মিক্সের আরও কিছু উপকারিতা হচ্ছে-
→এতে এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি এবং এন্টিওক্সিডেন্ট রয়েছে।
→সেল ড্যামেজ কমাতে সাহায্য করবে।
→ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করবে এবং মন ভালো রাখবে।
→মেমোরি বাড়াতে সাহায্য করবে।
→ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ রাখবে।
→এন্টিব্যাক্টেরিয়াল, এন্টি ফাংগাল, এন্টি ভাইরাল ইনফেকশন থেকে রক্ষা করবে এবং ইমিউনিটি বুস্ট করবে।
→ঠান্ডা, কাশি এলার্জিজনিত রোগ প্রতিরোধ করবে।
→হজমে সাহায্য করবে।
→ভালো ঘুমাতে সাহায্য করবে।
→হাল্কা ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
চকলেট মিন্ট চা
চকলেট খেতে পছন্দ করে না এমন মানুস খুব কমই আছে। আর শীতে চকলেটের উপকারিতাও বেশি। আমাদের কোকোয়া ক্ল্যাশ মিক্স দিয়ে মজাদার একটা চা বানিয়ে নিতে পারেন খুব সহজেই।
ঊপকরনঃ
ফ্রেশ মিন্ট কয়েকটি
গরম পানি
কোকোয়া ক্ল্যাশ ১/৪ চা চামচ
প্রনালিঃ
কাপে কয়েকটি ফ্রেশ মিন্ট নিয়ে একটু থেতলে নিন। এবার পানিতে আর কিছু মিন্ট দিয়ে হাল্কা জাল করে নিন। এবার এতে কোকোয়া ক্ল্যাশ মিক্স করে নামিয়ে নিন।
আমাদের শরীরে এন্ডরফিন হরমোন সঠিকভাবে নিঃসরণে সাহায্য করে চকোলেট। এই হরমোনের সাহায্যে আমাদের মন ভাল থাকে। এ ছাড়া, শীতকালে আমাদের শরীরে এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে চকোলেট।
বাদশাহি চা
ঊপকরনঃ
পানি ২ কাপ
চা পাতা ১-১.৫ চা চামচ
কিসমিস ১ চামচ
বাদশাহি ড্রিংক মিক্স ১.৫ চামচ
কনডেন্স মিল্ক ২ চামচ,
হরলিক্স ১ চামচ,
কফি পাউডার ১ চামচ।
প্রনালিঃ
→প্রথমে পানি বয়েল করে নিতে হবে। এরপর বয়েল করা পানি তে চা পাতা দিয়ে দিতে হবে। কিছু সময় জাল করে নামিয়ে নিতে হবে।
→কিসমিস খুব ভালো কোনো কফি মিক্সচারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে অথবা শিলা পাটাতে পিষে নিতে হবে। তবে পানি ব্যবহার করা যাবে না এক্ষেত্রে।
→তৃতীয়ত একটি মগে কিছুটা জাল করে রাখা লিগার নিয়ে সেখানে বাদ শাহি ড্রিংক মিক্স, কিসমিস এর মিশ্রণ, কনডেন্স মিল্ক, হরলিক্স, কফি পাউডার খুব ভালো করে বিটারের সাহায্যে মিশিয়ে নিতে হবে।
→চায়ের ওপর সুন্দর একটি ফোমের লেয়ার তৈরী হবে সুন্দর করে ডেকোরেশন করে নিন। ব্যস তৈরী হয়ে গেল বাদশাহি বাদাম জাফরানের চা।
সুন্দর একটি চায়ের কাপে পরিবেশন করুন। কিছুটা গুড়ো দুধ এবং কফি খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন অধের্ক কাপের ওপর, তা ছড়িয়ে দিন বাকি অধের্কটাতে। শুধু কফি ছড়িয়ে দিন।