খেজুর চিনি কিভাবে বাংলাদেশে এল
খেজুর চিনি
“চিনির পরিবর্তে খেজুর চিনি” এই স্লোগানে শুরু হয়েছিল Shadleens Herb পেজের যাত্রা। বাংলাদেশে প্রথম আমরাই এই খেজুর চিনি তৈরি করেছিলাম। অসম্ভব মিস্টি পছন্দ করে আমার মেয়ে “Sehrish Shadleen”। ৬ মাস পর যখন ওর সলিড খাবার শুরু করলাম মিস্টি না হলে সে খেতেই চেত না। যেহেতু ১ বছরের আগে বাচ্চাদের চিনি দেয়া নিষেধ তাই ভাবতে লাগলাম কি দেয়া যায়। আমার পরিচিত অনেক ডাক্তার এবং পুস্টিবিদ তালমিশ্রি দিতে নিষেধ করলো। বললেন চিনি আর তালমিশ্রি অনেকটা একই জিনিস। তাই ওর জন্য ন্যাচারাল সুইটনার নিয়ে গবেষণা করতে লাগলাম। যেহেতু ৬ মাস পর বাচ্চাদের আয়রনের ঘাটতি দেখা যায় তাই মাথায় আসলো দুইটা ন্যাচারাল সুইটনার নিয়ে যা খাবার মজাও করবে আয়রনের ঘাটতিও দুর করবে। এই দুইটা হল-
→খেজুর চিনি
→খেজুর সিরাপ
বাহিরের দেশগুলো তে এই দুইটা জিনিস এভেইলেভেল হলেও বাংলাদেশে কোথাও এটা খুজে পেলাম না। খেজুর সিরাপ কেউ কেউ বাসায় বানালেও খেজুর চিনির কোন অস্তিত্বই খুজে পেলাম না আমাদের দেশে। তাই অবশেষে বাসায় বানিয়েই ফেললাম কাংখিত সেই খেজুর চিনি। সেই থেকে শুরু হল আমার খেজুর চিনির যাত্রা।
বাচ্চাদের জন্য কেন এত উপকারী এই খেজুর চিনি
বাচ্চাদের জন্য খেজুর চিনি খুবই উপকারী। বাচ্চার ১ বৎসর বয়স পূর্ণ হবার আগে তার খাবারে চিনি কিংবা গুড় ব্যাবহার করতে নিষেধ করা হয়ে থাকে। তাই বলে কি ছোট্ট_সোনা মিস্টি জাতীয় খাবার খাবে না। সেক্ষেত্রে খেজুর চিনি বাচ্চাদের খাবারে ব্যবহার করা খুবই সহজ। বাচ্চাদের ৬ মাস বয়সের পর থেকেই খেজুর চিনি খাওয়াতে পারেন। প্রকৃতিতে যত ধরনের খাবার আছে তার মধ্যে খেজুর সবচেয়ে বেশী পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ। শিশুদের আয়রনের চাহিদা পুরনে এই চিনি খুবই উপকারী।
স্পেশাল বাচ্চাদের জন্য খেজুর চিনি
স্পেশাল বাচ্চাদের জন্য চিনি খাওয়া বিষের মতই ক্ষতিকর। কিন্তু মিস্টি খাওয়ার ইচ্ছে তাদের থেকেই যায়। সেসকল বাচ্চাদের জন্য এই খেজুর চিনি অত্যন্ত উপকারী।
খেজুর চিনি দিয়ে কি খাওয়া যায়
খেজুর চিনি শুধু ছোটদের জন্য বানানো হলেও পরবর্তীতে এটা বড়দের জন্যেও উপকারী প্রমানিত হয়েছে। বড়দের চা কফিতে এটা চিনির পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও এটি দিয়ে কাস্টার্ড, পুডিং, সুজি, পায়েস, সেরেলাক, চা, কফি, মিল্কশেক সহ সকল মিষ্টি খাবার বানানো যায়।
খেজুর চিনির পুস্টিগুন
খেজুর একটি মিষ্টি জাতীয় ফল, এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন পটাসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে সহ প্রচুর খাদ্য গুণ রয়েছে যা আপনাকে প্রতিদিনের ক্যালরির চাহিদা পূরন করতে সাহায্য করে।
১। খেজুর চিনি পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন দূর করতে সাহায্য করে।
২। খেজুর চিনিশরীরে সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের সমতা রক্ষা করে।
৩। খেজুর চিনি ক্যালসিয়াম হাড়কে মজবুত করে।
৪। খেজুর চিনি হৃৎপিণ্ডকে শক্তিশালী করে।
৫। খেজুর চিনি শরীরের শক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে।
৬। খেজুর চিনি থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সেরোটোনিন নামক হরমোন উৎপাদন করতে সহায়তা করে যা মন ভাল রাখতে সহায়তা করে।
৭। খেজুর চিনি থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
৮। খাদ্যে অরুচি দূর করতে সহায়তা করে।
৯। খেজুর চিনি থাকা ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি দৃষ্টিশক্তি ভালো করতে সহায়তা করে।
১০। খেজুর চিনি থাকা পুষ্টি উপাদান ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
১১। খেজুর চিনি থাকা ডায়েটরি ফাইবার কলেস্টরেল এর সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
১২। খেজুর চিনিতে আছে স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার এবং বিভিন্ন অ্যামিনো এসিড যা খাবার হজমে সাহায্য করে থাকে। তাই বদ হজম থেকে বাচতে খেজুর খুবই উপকারী।
১৩। খেজুর চিনি তারুণ্য এবং যৌবন ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
১৪। খেজুর চিনিতে থাকা আয়রন রক্তশূন্যতা দূর করে।
খেজুর চিনি কেন এখন পেজে নেই
আন্তরিক ভাবে দু:খিত এই খেজুর চিনি এখন আর আমি বানাচ্ছি না। আমার মুল উদ্দেশ্য ছিল পুস্টিকর এই খেজুর চিনি যেন বাংলাদেশের শিশুরা খেতে পারে। আলহামদুলিল্লাহ অনেক বড় ছোট পেজ এখন এই খেজুর চিনি বানিয়ে যাচ্ছে; যার মাধ্যমে আমার সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। সেই উদ্দেশ্যকে আরও বড় করে পুরন করতে খেজুর চিনির পুরো পদ্ধতি আজ দেয়া হবে যাতে যারা কিনতে পারছেন না বাসায় বানিয়ে নিতে পারেন।
আমি বরাবরই নতুন কিছু করার চেস্টা করি যার ধারায় ধীরে বাদশাহি ড্রিংক মিক্স (যা এখন অনেকেই বানাচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ), সীডস সাইক্লিং, ইমিউনিটি ড্রিংক মিক্স এসেছে। আমাদের সকল আইটেম পুস্টিবিদের সাথে পরামর্শ করে করা হয়।দোয়া করবেন যেন প্রতিনিয়ত আমাদের কাস্টমার এবং আমাদের ফলোয়ার পেজগুলোর জন্য সব সময় নতুন কিছু নিয়ে আসতে পারি।
খেজুর চিনি বানানোর নিয়ম
অনেকেই আমাদের রিকুয়েষ্ট করেছেন খেজুর চিনি বানানো পদ্ধতি নিয়ে যেন আমি পোস্ট করি। আমার প্রধান উদ্দেশ্য বাচ্চা্রা যেন এই উপকারী খেজুর চিনি খেতে পারে। যেহেতু আমি এখন এই খেজুর চিনি বানাচ্ছি না এবং বাচ্চাদের দিতে পারছি না; তাই সকলের উপকারে শুধুমাত্র বাচ্চাদের কথা ভেবে খেজুর চিনির সম্পুর্ন রেসিপি দিচ্ছি। আশাকরি সকলের কাজে লাগবে।
উপকরন:
শুকনো খুরমা খেজুর (সাদা) ১ কেজি
প্রনালী:
প্রথমে খেজুর গুলোকে খুব ভালো করে কয়েকবার ধুয়ে পরিস্কার করে নিবেন। একে হালকা ভেজা অবস্থায় বিচি ফেলে ছোট করে কেটে নিবেন। যদি আপনার বাসায় হাই পাওয়ার ব্লেন্ডার না থাকে তাহলে যতটা সম্ভব ছোট করে কেটে নিবেন অন্যথায় ব্লেন্ডার ভাংগার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার একে স্টিলের ট্রে তে নিয়ে রোদে অথবা একটি তাওয়া দিয়ে চুলার উপরে একেবারে অল্প আচে সারাদিনের জন্য রেখে দিতে পারেন। কিছু সময় পরপর নেড়ে দিবেন। ভালো করে শুকিয়ে গেলে একেবারে শক্ত হয়ে গেলে বুঝবেন শুকানো হয়ে গেছে।
ব্লেন্ড করার আগে কিছুটা ঠান্ডা করে নিন। তবে অনেকক্ষন ঠান্ডা অবস্থায় রেখে দিলে আবার নরম হয়ে যেতে পারে।
এবার ভালো ভাবে গ্রাইন্ডারে গুড়ো করে নিন। কোন ভাবে ব্লেন্ডার টানা চালাবেন না। থেমে থেমে চালিয়ে গুড়ো করে নিন। ঝরঝরা না হলে পুনরায় শুকিয়ে নিয়ে গুড়ো করতে হবে। এবার চালনি দিয়ে চেলে নিন। চালার পর যেগুলো থাকে পুনরায় শুকিয়ে আবার গ্রাইন্ড করে চেলে নিবেন।
খেজুর চিনি মিহি এবং ঝরঝরে করতে একে বারবার শুকিয়ে কয়েকবার চেলে নিবে। এই পদ্ধতির জন্য বাংলাদেশের আমাদের বানানো খেজুর চিনি সবচেয়ে মিহি এবং ঝরঝরে হয়ে থাকে।
খেজুর চিনি নিয়ে বিএসএসএফ
২০২১ সালে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর সেফ ফুড এর পাব্লিকেশনে খেজুর চিনি নিয়ে একটি আমার একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
প্রবাসীর দিগন্তে খেজুর চিনির গুনগান
প্রবাসীর দিগন্তে ফুটে উঠেছে খেজুর চিনির গুনগান। সেই সাথে ফুটে উঠেছে আমাদের পেজের যাত্রা এবং উদ্যোক্তা হবার গল্প।
রেড লাইভ পেজে খেজুর চিনির গল্প
মা থেকে উদ্যোক্তা হবার গল্প এবং খেজুর চিনির যাত্রা নিয়ে রেড লাইভ পেজের একটি আর্টিকেল।