১ কেজি জাফরান ৮ লক্ষ টাকা!!

১ কেজি জাফরান ৮ লক্ষ টাকা!!

জাফরান

জাফরানের দাম নিয়ে প্রায় শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। জাফরান সম্পর্কে না জানার কারনে অনেকেই এই জাফরান এক কেজি হিসেবে নিতে চান যেখানে ১ গ্রাম জাফরানেরই অনেক দাম হয়ে থাকে। তাই জাফরান নিয়ে আজকে অজানা কথা জানাচ্চি।

*এক কেজি জাফরান উৎপাদন করতে প্রায় দুইটি ফুটবল মাঠের সমপরিমাণ জায়গার প্রয়োজন হয় যা অনেক ব্যয়বহুল।

*চারা লাগানোর প্রায় ৪ বছর পর এর ফুল আসতে শুরু হয়।

*জাফরান বাছাই করতে প্রয়োজন হয় দক্ষ কর্মীর।

*প্রতিটি ফুলে শুধু মাত্র ৩ টি জাফরান হয়ে থাকে৷

*৪০০ গ্রাম জাফরানের জন্য প্রায় ৭৫ হাজার ফুলের প্রয়োজন হয়।

*৭২ গ্রাম জাফরান শুকিয়ে প্রায় ১২ গ্রাম থেকেও কম জাফরান হয়ে থাকে।

*দক্ষ কর্মীদের সাধারণত ১ কেজি জাফরান সংগ্রহ করতে প্রায় ৪০ ঘন্টা সময় লাগে।

*এত মুল্যবান এই মসলাকে তাই ‘রেড গোল্ড’ বলা হয়ে থাকে।

*কয়েক বছর আগেও প্রায় ১ আউন্স জাফরানের মুল্য ১ আউন্স সোনার থেকে বেশি ছিল। এবং একে মাপার জন্য সোনা মাপার মেশিন প্রয়োজন হত।

কিছু দেশে বর্তমান জাফরানের দাম

*ভারতে এক কেজি জাফরান ২৭০,০০০ রুপি।

*আমেরিকা এক কেজি জাফরান ৫০০০ ডলার।

*দুবাইতে ৩৩,০০০ দিরহাম।

তবে জাফরানের কোয়ালিটির উপর ভিত্তি করে একে অনেক গ্রেডে ভাগ করা হয়। তাই এর মুল্য সব দেশে তারতম্য ঘটে। বাংলাদেশে তাই সবচেয়ে ভালো মানের জাফরান গ্রাম প্রতি ৪০০-৯০০ টাকায় বিক্রয় হয়ে থাকে (এ এবং বি গ্রেড)

(যেহেতু আমদানি নির্ভর, তাই দাম পরিবর্তনশীল)

তবে এত কিছুর পরেও জাফরানের শত উপকারীতার কথা ভেবে এটা অনেকেই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় যোগ করে নেন 😊

ওজন অনুযায়ি আমরা জাফরানের দাম মনেকরে থাকি, যা সবার কাছেই অনেক বেশি মনে হয়।

আসুন একটা ক্ল্যালকুলেশন করি…

১গ্রাম জাফরানের দাম ৪০০-৯০০ (গ্রেড ভেদে) টাকা, যা একজন মানুষ প্রতিদিন একবার রাতে ঘুমানোর আগে ১ কাপ দুধে ২-৩ পাপরী করে খেলেই এর উপকার গুলো পাওয়া যায়। এভাবে ১গ্রাম জাফরান এক জন মানুষ ২৫-৩০ দিন নিতে পারবেন।

২৫ দিন হিসাবে প্রতিদিন জাফরান খেলে আপনার খরচ ১৬.৮০-৩০ টাকা। নিজের স্বুস্বাস্থের কথা ভেবে কি আপনার জন্য প্রতিদিন ১৬.৮০-৩০ টাকা খরচ কারতে পারবেন না।

অন্যদিকে একটি ব্যানসন সিগারেটের দাম ১৬টাকা। জানিনা একজন মানুষের দিনে তা কয়টা লাগে…এবার সিদ্ধান্ত আপনার।

কাশ্মিরি জাফরান

জাফরানের উপকারীতা

→জাফরানে আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, আয়রন, ভিটামিন সি সহ প্রায় ১৫০টি উপাদান যা সহজেই শরীরের উপকারে আসে।

→ত্বকের রঙ ফর্সা করে, ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল করে, চুলকে করে তোলে ঝলমলে, ত্বকে বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করে।

→জাফরান দুধের সাথে মেশানো হলে তা হজমশক্তিকে উন্নত করে

→গর্ভবতী মায়েরা জাফরান খেলে পেটের শিশুর রঙ ফর্সা হয়। তবে ৫ম মাস থেকে এই জাফরান খাওয়া যেতে পারে।

→এটা ঠান্ডা কাশি কমাতে সাহায্য করে।

→মাসিকের অসস্তিকর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে এক গ্লাস জাফরান মিল্ক অনেক উপকারী।

→হার্ট সুস্থ রাখা, মানসিক সমস্যা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এটা খুব উপকারী।

রুপচর্চায় জাফরান

প্রসাধনীর পিছনে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে কিন্তু মুখ ধুয়ে নিলেই যদি সব শেষ হয়ে যায় তাহলে আর লাভ কি!! তাই সুন্দর্য আসা চাই ভেতর থেকে।

ত্বকের রং উজ্জ্বল ও সুন্দর করতে, ত্বক থেকে বলিরেখা ও কালো দাগ মুছে দিতে জাফরান অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। জাফরান শুধু মাত্র বাইরে থেকেই কাজ করে না, ভেতর থেকেও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। আর এই জাফরান যখন মধুর সঙ্গে খাওয়া হয়, তখন তার কার্যকারিতা বহুগুণ বেড়ে যায়।

তবে খাওয়া ছাড়া বানাতে পারবন বিভিন্ন ফেস প্যাক।

নরম ত্বকের জন্য ফেস প্যাক:

এর জন্য আপনার লাগবে ১ টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়ো, ২-৩টি জাফরান এবং ২ চা চামচ দুধ। একটি পাত্রে সব উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে নিন। সারা মুখে এবং ঘাড়ে লাগান। শুকিয়ে গেলে হালকা হাতে কয়েক মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। চন্দন এবং জাফরান দাগহীন এবং উজ্জ্বল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।

শুষ্ক ত্বকের জন্য

এই ফেস মাস্কটি তৈরি করতে আপনার শুধু দুটি উপাদান লাগবে। এর জন্য আপনার প্রয়োজন হবে ২-৩টি জাফরান এবং ১ টেবিল চামচ মধু। একটি পাত্রে উভয় উপাদান মিশিয়ে নিন। আপনার আঙুল দিয়ে সারা মুখে এবং ঘাড়ে আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন। কয়েক মিনিট রেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন।

নিস্তেজ ত্বকের জন্য

এই ফেস প্যাকের জন্য আপনার এক চিমটি জাফরান এবং ৪ টেবিল চামচ দুধ লাগবে। একটি পাত্রে দুধ ঢেলে জাফরান কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। একটি তুলোর বলের সাহায্যে এই মিশ্রণটি সারা মুখে এবং ঘাড়ে লাগান। এটি শুকাতে দিন এবং তারপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাকটি আপনার ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতেও সাহায্য করে। এটি ব্রণ এবং ব্রেকআউটের সমস্যা কমায়।

উজ্জ্বল ত্বকের জন্য

এই ফেসপ্যাকটি তৈরি করতে আপনার প্রয়োজন হবে ২-৩ টি জাফরান, ১ চা চামচ দুধ, ১ চা চামচ জল, ২ ফোঁটা নারকেল তেল এবং এক চিমটি চিনি। একটি পাত্রে জলে জাফরান ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিন। পরের দিন মিশ্রণে দুধ, চিনি ও তেল যোগ করে মেশান। একটি তুলোর বল ব্যবহার করে এই ফেসপ্যাকটি আপনার সারা মুখে এবং ঘাড়ে লাগান। ১৫ মিনিট রাখুন এবং তারপর ধুয়ে ফেলুন।

কিভাবে খাবেন?

জাফরানের সকল উপকারীতা পেতে জাফরান খাবার নিয়ম মানতে হবে। দুধ অথবা পানি অথবা চা বানিয়ে সহজেই খেতে পারেন।

জাফরান দুধ

গরুর দুধ ১ কাপ

জাফরান দানা ১ চিমটি

১ চামচ আলমন্ড পাউডার/মিক্সড বাদাম পাউডার

১ চা চামচ মধু

প্রণালী:

চুলায় আগে থেকে ফুটিয়ে রাখা দুধ দিন। বেশি ঘন দুধ নেবেন না। দুধের মাঝে জাফরান দিয়ে দিন। ২ মিনিট ফুটিয়ে চুলো বন্ধ করে দিন। এর মাঝে বাদাম গুড়ো দিয়ে দিন। বাদাম গুড়ো দিয়ে দিয়ে চুলোর ওপরেই দুধে ঢাকনা দিয়ে রাখুন ৫ মিনিট। কুসুম কুসুম গরম হলে কাঁচের বা সিরামিকের কাপে ঢেলে নিন। মধু মিশিয়ে পান করুন। মধু খেতে না চাইলে এর মধ্যে খেজুর চিনি দিয়ে খেতে পারেন।

এই জাফরান বাদাম মিল্ক ছোট বড় সকলেই খেতে পারবেন। এটা খেতে যেমন অসাধারণ তেমনি অসম্ভব উপকারি।

জাফরানি চা:

পানি – ২ কাপ

জাফরান – ৪-৫ টি

অর্গানিক মধু- ১/৪ চা চামচ

চা পাতা – ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক)

আদা কুচি – সামান্য

দারচিনি – ১ টুকরো

প্রনালী:

★পানির সাথে আদা এবং দারচিনি দিয়ে জ্বাল দিন।

★কিছু সময় হলে সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে জ্বাল দিন।

★হয়ে গেলে ছেকে মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন।

জাফরান পানি:

জাফরান পানি সারা বিশ্বে অনেক জনপ্রিয়। জাফরানকে পানিতে কয়েক ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে তারপর এই জনপ্রিয় জাফরান পানিটা খেতে হয়।

জাফরান পানির রয়েছে অনেক উপকার। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো, হজম ক্ষমতা বাড়ানো, ইনফ্ল্যামেশন কমাতে এবং ঘুমের সমস্যা মোকাবিলায় জাফরান অনেক উপকারী।

এছাড়াও অনেকে স্কিনকে উজ্জ্বল করতে এই জাফরান পানি খেয়ে থাকেন।

জাফরান কেনার আগেই অরিজিনাল জাফরান কিনা যাচাই করে নিতে হবে। বেশি রঙ হলে জাফরান যে অরিজিনাল হলে তা নয়। আজকাল অল্প টাকায় জাফরান পাওয়া যায়। তাই কেনার আগে ভালো ভাবে যেনে নিন। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের পেজে ৪ বছরের অধিক সময় থেকে জাফরান বিক্রয় করা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত এর অনেক ভালো রিভিউ এসেছে।

অর্ডার লিংক-https://shadleens.com/product/irani-saffron-zafran/

Leave a Comment

Your email address will not be published.

Share the Post:

Related Posts

হেলদি শস্যগুলো ৬ মাসের শিশুকে কিভাবে খাওয়াবেন। চলুন যেনে নেই ৬ মাসের শিশুকে মাখানা, কিনোয়া, রাগি, মিলেট, সাবু, গম এবং বার্লি খাওয়ানোর সহজ রেসিপি।

৬ মাসের বাচ্চার জন্য খাবার নরম, সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর হওয়া প্রয়োজন। এখানে উল্লেখিত উপাদানগুলো দিয়ে সহজ কিছু রেসিপি দেওয়া হলো:

Read More
গোল্ডেন ইমিউনিটি ড্রিংক মিক্স

আজব এই ড্রিংক মিক্সের রয়েছে অসংখ্য উপকারীতা এবং খাওয়াও যায় ৮ ভাবে। চলুন যেনে নেই কি সেই গোল্ডেন ইমিউনিটি ড্রিংক মিক্স

গোল্ডেন ইমিউনিটি ড্রিংক মিক্স গোল্ডেন ইমিউনিটি ড্রিংক মিক্স কাচাহলুদ, আদা, এলাচ, দারচিনি এবং গোলমরিচ দিয়ে তৈরী। এই প্রাকৃতিক উপাদান গুলো

Read More
Change